শিরোনাম
॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ৩১ মার্চ, ২০২৩ (বাসস) : জেলায় আলুর চিপস (স্থানীয় নাম আলুর পাঁপড়) তৈরি করে চলছে কোটি টাকার কারবার। মাঠের ফাঁকা স্থান আর বাঁধের অনেক জায়গায় বড় বস্তা কিংবা জাল বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে পাতলা করা আলু। এসব শুকানো আলু ভেজে তৈরি হচ্ছে চিপস বা পাঁপড়। এটি সকলের নিকট এক ধরনের মুখোরচক খাবার হিসেবে পরিচিত।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার শ্রীকৃষ্টপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আলু থেকে চিপস তৈরির কাজে ওই এলাকার প্রায় ৪শ পরিবারের ৮৫ শতাংশই লোক এ পেশার সঙ্গে জড়িত। শ্রীকৃষ্টপুর ছাড়াও পাশের কেশবপুর ও ভদ্রকালী গ্রামের কিছু মানুষও এসব স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। গ্রাম ঘুরতেই চোখে পড়বে, কেউ আলু সেদ্ধ করছেন, আবার কেউ সেদ্ধ আলু পাতলাভাবে গোলাকার করে কাটছেন। আবার কেউ কেউ গোলাকার আলু রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ চিপস তৈরির কাজ করে থাকে। আলুর চিপস তৈরি ও বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। চিপস তৈরি কারকরা জানান, ক্যাডিনাল জাতের আলু চিপস তৈরিতে ভালো। অন্য জাতের আলু দিয়ে চিপস তৈরি হলেও তেমন স্বাদ পাওয়া যায় না। বাজার থেকে প্রতি মণ ক্যাডিনাল আলু ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে কেনা হয়। সেই আলু সেদ্ধ করার পর গোলাকার করে ( চিপস আকারে) কেটে রোদে শুকিয়ে ভেজে চিপস তৈরি করা হয়। এক মণ আলুর আট থেকে সাড়ে আট কেজি চিপস হয়। প্রতি মণ চিপস চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। এ কাজের সঙ্গে জড়িত আজিরন বিবি, তহমিনা ও রুবি খাতুন বলেন, যার যেমন সার্মথ্য অনুয়ায়ী আলু কিনে বাড়িতে নিয়ে আসেন। আলু পানিতে ধুয়ে সেদ্ধ করতে হয়। সেগুলো আবার একটু ঠান্ডা হলে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বটি দিয়ে পাতলা করে কাটতে হয়। কাটা আলু গুলো সকালে শুকাতে দিয়ে আবার বিকেলে তুলতে হয়। রোদ ভালো হলে পাতলা করে কাটা আলু শুকাতে দুই দিন সময় লাগে। শুকানোর পর এগুলো বিক্রির উপযোগী হয়। ৩৫০ মণ আলু কিনে চিপস তৈরি করছেন জান্নাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, আলুর চিপসের ব্যবসা করি। পরিবারের সকলকে নিয়ে এ কাজ করি। সব সময় এ কাজে লেগেই থাকতে হয়। দুই মাস আলুর চিপসের চাহিদা ব্যাপক থাকে। তারপর বৃষ্টি নামলে সেভাবে শুকানো যায় না। নিজস্ব পুঁজি থেকে বছরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার মণ আলু কেনেন মোহাম্মদ আলী বাবু। তিনি বলেন, এসব আলু কিনে আমি গ্রামের মানুষদের বাড়িতে দিয়ে চিপস তৈরি করে নিই। এর বিনিময়ে তাদের টাকা দেওয়া হয়। অনলাইনে বা মোবাইলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকার মহাজনরা জানালে আমরা সেখানে কুরিয়ার করে চিপস পৌঁছে দেই। তিনি বলেন, এসব কাজ করে সামান্য কিছু লাভ থাকে। তবে সরকারিভাবে ঋণ সহায়তা পেলে আমরা এ কাজ বড় পরিসরে করতে পারবো। এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। আলুর চিপস ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি মৌসুমে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত আলুর চিপস তৈরির কাজ করা হয়। প্রতি মৌসুমে ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার মণ আলু কাটা হয়। এবারও ২০ হাজার মণের বেশি আলু কাটা হবে। বর্তমানে প্রকারভেদে ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মণ চিপস বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ৫ মণ আলু থেকে এক মণ চিপস তৈরি হয়। এক মণ চিপস তৈরি করতে ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। সেই হিসেবে এখানে প্রতি বছর দুই কোটি টাকার চিপস বিক্রি হয়ে থাকে। এতে খরচ বাদে কয়েক লাখ টাকা লাভ থাকে ব্যবসায়ীদের। আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী বলেন, এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অতি দরিদ্র। সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও ভালো কিছু হতো। আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের মানুষ অনেকদিন ধরে আলু থেকে চিপস তৈরির কাজ করে আসছেন। এখান থেকে নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এ শিল্পকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাদেরকে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদানসহ আলুর চিপসকে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে তৈরি করার বিষয়টিতে নজর রাখা হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।