বাসস
  ১৭ জুন ২০২৩, ১৭:১১
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ১৭:৪৬

চ্যালেঞ্জিং বাজেট বাস্তবায়নে গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই

ঢাকা, ১৭ জুন, ২০২৩ (বাসস) : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সচরাচর যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয় তার তুলনায় অনেক বেশি রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মূল্যস্ফীত ৬ শতাংশে ধরে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে সেটি বাস্তবায়নও বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা মার্কিন  ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন আর অভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার ফলেও মূল্যস্ফীতির চাপ অব্যাহত থাকতে পারে।  তাই চ্যালেঞ্জিং এই বাজেট বাস্তবায়নে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি নিষ্ঠা দেখাতে হবে।
শনিবার ঢাকায় উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে বাজেট পর্যালোচনা গোলটেবিল বৈঠকে এমন মতামত দিয়েছেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন গবেষকবৃন্দ। রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ের খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর  ড. আতিউর রহমান।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. এম. এম. আকাশ, বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো অব প্র্যাকটিস ড. মাহীন সুলতান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. এ. কে. এনামুলক হক, বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট  ড. নাজনীন আহম্মেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়নের অধ্যাপক ড. এম. আবু ইউসুফ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. রুমানা হক, বিআইজিডির ভিজিটিং ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং বিআইআইএসএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় মোট বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলা হলেও এই বরাদ্দ থেকে সরকারি পেনশন ও উন্নয়ন প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষার অংশ কমে দাঁড়ায় ১১.৬ শতাংশ। বিদ্যমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাজেটে নগর অঞ্চলের দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষের জন্য নতুন কোন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি না থাকাটা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন আলোচকেরা। সামাজিক সুরক্ষা প্রসঙ্গে ড. এ. কে. এনামুল হক বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের একটি শর্ত হলো সার্বজনীন পেনশন স্কিম। কিন্তু এটি পরিকল্পনায় থাকলেও  বাস্তবায়নে ধীর গতি হতাশাজনক। ড. রুমানা হক বলেন ‘বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ৫ শতাংশের আশেপাশে আটকে আছে বহুদিন। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা বাবদ ব্যয়ের চাপ বাড়ছে জনগণের ওপর।”
সমাজে যারা বিত্তবান তাদের কাছ থেকে বেশি কর আহরণের পরিবর্তে করযোগ্য নন এমন মানুষের কাছ থেকে আয়কর রিটার্ন বাবদ টাকা আদায়ের চেষ্টা এবং প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের ওপর বেশি নির্ভরতার কারণে বাজেটের কর প্রস্তাবগুলোকে গণবান্ধব করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মস্তব্য করেন ড. জুলফিকার আলী। জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের আহ্বান জানান ড. নাজনীন আহম্মেদ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, আপতকালিন বাস্তবতার নিরিখে আসছে অর্থবছরের জন্য সরকারি আয়-ব্যয়ের একটি চ্যালেঞ্জিং পরিকল্পনা হিসেবেই প্রস্তাবিত বাজেটকে দেখতে হবে। একই সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কালের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অর্জনগুলো যে শক্তি যোগাবে সেটিও মনে রাখতে হবে।